Showing posts with label Fasting for diabetic patients. Show all posts
Showing posts with label Fasting for diabetic patients. Show all posts

Tuesday, June 7, 2016

ডায়াবেটিক রোগীর জন্য রোজা

sasthobarta protidin
রোজা রাখতে ডায়াবেটিক রোগীদের সাধারণত কোনো নিষেধ নেই। কারো কারো জন্য ঝুঁকি বেশি থাকতে পারে, তারা হলেন-

* অ্যাডভান্সড কিডনি রোগ- যাদের ডিহাইড্রেশন হওয়ার আশংকা থাকে, যা বিপদজনক।

* হার্টের রোগী যারা আট-দশটা ওষুধ নিয়মিত খায়।

* অনেক বেশি সুগার ফলে জটিলতার ভয় থাকে।

* সম্প্রতি জটিলতা নিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে (যেমন কিটোএসিডসিস)।

* গর্ভবতীর রোজা রাখা ঠিক নয়।

* বারবার ইনসুলিন নিলে বা অন্য ওষুধ নিলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হওয়ার আশংকা থাকলে রোজা রাখা যায় না।

রোজার দিনে খাবার

বাস্তবতা হল রোজার মাসে কর্মব্যস্ততা, অফিস ইত্যাদি রাতে করতে পারলে ভালো হতো, দিনের বেলা পারতপক্ষে কম কায়িক পরিশ্রম করা ভালো। খাওয়ার বিশেষ কোনো নিষেধ নেই। আমরা অন্য সময় যা খাই তাই খেলে সমস্যা হতো না। রোজার সময় বিশেষ খাবার খাই বলেই সমস্যা হয়। ক্যালরি ঠিক রেখে খেতে পারলেই হল। নাশতা যদি ইফতার হয়, ডিনার যদি রাতের খাবার হয়, তারাবির পর যদি লাঞ্চ করি তা হলে সমস্যা নেই। সমস্যা হল কেউ কেউ ইফতারেই রাতের খাবার সেরে নেন; অনেকেই শেষ রাতে কিছু খান না, বরং ইফতারির পর থেকে সেহরি পর্যন্ত এটা-ওটা (স্ন্যাকস) খেয়ে কাটিয়ে দেন। শেষরাতে খেতে হবে রেগুলার খাবার। রোজাদারের জন্য মিষ্টি বাদ দিতে হবে। চর্বি জাতীয় খাবার, ভাজাপোড়া কম খেতে হবে। ভাজাপোড়ায় তেল/চর্বি বেশি। ভূরিভোজ চলবে না। বারবার কিন্তু কম খাওয়া ভালো।

সবার জন্য ফল খাওয়া ভালো। ডায়াবেটিক রোগীর প্রতিদিন একটা মিষ্টি ফল খাওয়া উচিত। টক ফল খাওয়া খুব ভালো। ফলে ফ্রুক্টোজ থাকে। ফ্রুক্টোজ স্বাদে চিনির মতো মিষ্টি কিন্তু এতে গ্লুকোজ নেই। যে ফলে যত বেশি ফ্রুক্টোজ ডায়াবেটিক রোগীর জন্য সেটা তত ভালো। রোজার দিনে বিশেষ করে আমাদের খেজুর খাওয়ার অভ্যাস। খেজুর নিষেধ নয়। পরিমাণ (প্রতিদিন ৪/৫টা) ঠিক রেখে খেলে বরং উপকার।

রোজার দিনে ডাক্তারের বিশেষ দায়িত্ব

* রোগীর রোজা রাখার সামর্থ্য আছে কিনা যাচাই করা

* রোজার সম্ভাব্য জটিলতা ও তার সমাধানের ধারণা দেয়া

* রোজা রেখে ব্লাড গ্লুকোজ পরীক্ষার করা যায় কিনা তার ধারণা দেয়া

* ওষুধ ও ব্যায়াম সম্পর্কে ধারণা দেয়া

* সঠিক সহজ ডোজের ট্যাবলেট বাতলে দেয়া

রোজাদারের কী কী সমস্যা হতে পারে

ডিহাইড্রেশন : পানি কম খাওয়া, অপরিমিত কায়িক শ্রম, ওষুধ ইত্যাদি কারণে পানিস্বল্পতা হওয়ার শংকা থাকলেও বাস্তবে কম হয়। রাতেরবেলা পানি পুষিয়ে খেতে হবে। ফজরের আজানের আগ পর্যন্ত খাওয়া চালাতে হবে। দিনের প্রথম ভাগে কাজ বেশি করা যেতে পারে। আসলে রোজার শুরুতে সমস্যা হলে ও পরের দিকে অ্যাডজাস্টেড হয়ে যায়। তবে আবহাওয়া বুঝে কাজ করতে হবে। সতর্কতার বিকল্প নেই। শসা, ডাব ইত্যাদি প্রকৃতি প্রদত্ত পানি মেন্যুতে রাখতে হবে।

হাইপোগ্লাইসেমিয়া (হাইপো) : সুগার অনেক কমে গেলে কিছু উপসর্গ দেখা দেয়। স্বাভাবিক মানুষের গ্লুকোজ ২.৫ মিমোল বা তার কম হলে হয়। যারা ডায়াবেটিসের ওষুধ খান তাদের ৩.৫ হলেই হয়। তবে ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তের পরিমাণ দেখার চেয়ে উপসর্গ দিয়েই বিবেচনা করতে হয়।

ভীতি থাকলেও পরিসংখ্যান আমাদের ধারণাকে সমর্থন করে না। রোজা রাখলেই হাইপো হবে এ ধারণা ঠিক না। ডায়াবেটিসের ওষুধ না খেলে হাইপো হয় না। সব ওষুধে হাইপো হওয়ার আশংকা সমান নয়। ১২-১৪ ঘণ্টা না খেয়ে থাকলেও কারো হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয় না। যারা সালফোনিলুরিয়া ট্যাবলেট খান ও ইনসুলিন নেন তাদের হাইপো হওয়ার আশংকা অনেক বেশি। তাই ওষুধ ও ডোজ অ্যাডজাস্টমেন্ট করতে হয়। সন্দেহ হলে আঙ্গুল থেকে রক্ত পরীক্ষা করতে হবে। নিশ্চিত হলে মিষ্টি খেয়ে নিতে হবে।

রাতের শেষ ওয়াক্তে সেহেরি খেতে হবে।

* ইফতারিতে ভূরিভোজ আর সেহরিতে লাইট খাবার বা না খাওয়ার অভ্যাস বাদ দিতে হবে।

* দিনের বেলায় যত সম্ভব কায়িক শ্রম কমাতে হবে। তারাবিতে কায়িক শ্রম ধরেই দিনের ব্যায়ামের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে।

কিটোএসিডোসিস/ হাইপারঅসমলার স্টেট/ হাইপারগ্লাইসেমিয়া : এখানে ডিহাইড্রশন একটা বড় ফ্যাক্টর বিশেষ করে বয়স্ক লোকদের। হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ভয়ে ওষুধ অনেকেই বাদ দেন বা অযৌক্তিক কমিয়ে দেন। পরিশ্রম কম করে বিধায় সুগার বেশি হয়ে যায়। গ্লুকোজসমৃদ্ধ খাবার এবং পার্টি ভোজন কম করা ভালো। ফাইন সুগার কম খেতে হবে। কমপ্লেক্স শর্করা (রুটি, ভাত) ও শাক-শবজি, ডাল, ফল এবং আঁশসমৃদ্ধ খাবার বেশি খেতে হবে।

খাদ্যনালীর সমস্যা : ইফতারি ও সেহরিতে অনভ্যস্ত খাবার এবং রাস্তাঘাটের খাবার এ সমস্যার কারণ। সারাদিন খালি থাকা খাদ্যনালী সবকিছু সহ্য নাও করতে পারে! কিছু কিছু ওষুধও বাদ দেয়া লাগতে পারে। বমি, পাতলা পায়খানা হলে সোডিয়াম পটাশিয়াম কমে যাওয়ার ও প্রস্রাব কমে যাওয়ার রিস্ক থাকে।

রোজার দিনে রক্ত পরীক্ষা : রোজার তিন মাস আগে থেকেই গ্লুকোজ কন্ট্রোলে থাকলে এই মাসে কিছু হওয়ার কথা নয় অযৌক্তিক কিছু না করলে। বাংলাদেশ, মিসর, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশের আলেমদের মতানুযায়ী আঙ্গুল থেকে রক্ত পরীক্ষা করলে রোজা ভাঙে না। যার গ্লুকোজ কন্ট্রোলে নেই সেহরির দু’ঘণ্টা পরে, ইফতারির আগে, ইফতারির দু’ঘণ্টা পরে এক বা একাধিকবার রক্ত পরীক্ষা করতে হয়। নাশতার আগে ৬ মি.মো ও খাওয়ার পরে ৮-১০ মি.মো টারগেট করতে হবে।

ওষুধ নিয়মিতকরণ : সহজতর হল সকালের ওষুধটা সন্ধ্যায় অর্থাৎ ইফতারের পানি পান করে খেয়ে নিলে হয়। বাকিটা রাতে ভাগ করে খেয়ে নিলেই হল।

ইনসুলিন : যারা দিনে দুই ডোজ নেন তারা সকালেরটা সন্ধ্যায় নিবেন। মনে রাখা সহজ হল ইফতার অর্থ নাশতা, আমরা রোজার দিনে নাশতা করি সন্ধ্যায়, তাই নাশতার ডোজটা নাশতায় নিলেই হল। দ্বিতীয় ডোজটা শেষরাতে নিলেই হল। তবে সতর্কতা হিসেবে রোজার প্রথম দিকে দ্বিতীয় ডোজটা অর্ধেক নেয়া যেতে পারে। ৪-৫ দিন পরে সেহেরির পর (সকাল ৮-৯টা) সুগার পরীক্ষা করে দেখতে হবে। যদি বেশি থাকে ইনসুলিন বাড়াতে হবে। বাস্তবতা হল যে সব রোগীর ইনসুলিন ছাড়া কন্ট্রোল হয় না তাদের ডোজ কমানো দরকার পরে না।

ট্যাবলেট : সালফোনিলুরিয়া ২৪ ঘণ্টা কাজ করে তাই পারতপক্ষে সন্ধ্যায় এক ডোজ নেয়া ভালো। সালফোনিলুরিয়া শরীরে গ্লুকোজ কম থাকলে আরও কমায় অর্থাৎ খাই আর না খাই গ্লুকোজ কমাবেই তাই হাইপো হওয়ার আশংকা বেশি। সাস্টেইনড রিলিজ (এসআর) মডিফাইড রিলিজ (এমআর) ট্যাবলেটগুলো পছন্দনীয়।

মেটফরমিন : গ্লুকোজ সেন্সিটাইজার। ইনসুলিন বেশি না থাকলে কমায় না তাই হাইপো হওয়ার কথা না। দুইবেলা তিনবেলা এবং ফুলডোজে নেয়া যেতে পারে। মনে রাখতে হবে মেটফরমিন ডায়রিয়া বমির কারণ হতে পারে। সে জন্য সম্ভব হলে রোজার দিনে সর্বনিু ডোজ দিতে হবে।

ইনক্রেটিন (ভিলডাগ্লিপট্ন, সিটাগ্লিপটিন, সেক্সাগ্লিপটিন), লিরাগ্লুটাইড : খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যে ইনসুলিন নিঃসরণ হয় এরা সেই ইনসুলিন ভাঙতে দেয় না। তাই রোজার দিনে সন্ধ্যাবেলার ডোজ নিরাপদ। তবে বমি বা ডায়রিয়ার ঝুঁকি থাকে। দরকারে ডোজ কমাতে হবে।

লিরাগ্লুটাইড সহ্য হয়ে গেলে সন্ধ্যাবেলায় একমাত্র ওষুধ এক ডোজ নিলেও হতে পারে।

মেটফরমিন ও ইনক্রেটিন গ্রুপ সহ্য না হওয়ার আশংকা থাকলে মডিফাইড রিলিজ সালফুনিলুরিয়া দিয়ে চিকিৎসা করা যায়। তবে ইনসুলিনের পরিবর্তে এক মাস বড়ি দিয়ে চলতে পারে ধারণা ঠিক নয়।

এসজিএলটি ২ ইনহিবিটর : নতুন ওষুধ অভিজ্ঞতাও কম। এরা এমনিতই ডিহাইড্রেশন করে, কিটোএসিডসিস বাড়ায় বিধায় ব্যবহার না করা ভালো।

রোজাদারের ব্যায়াম : ব্যায়াম ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য অত্যাবশ্যক। রোজার সময় তারাবির নামাজের ঘণ্টাখানেকের শ্রম ব্যায়াম হিসেবে নিয়েই ব্যায়ামের প্লান করতে হবে। ইফতারের এক ঘণ্টা পরে কায়িক শ্রম করা ভালো। দিনের শেষদিকে কায়িক শ্রম বাদ দিতে পারলে উত্তম। তারাবিতে যাওয়া-আসার রাস্তাটা ঘুরে গিয়ে লম্বাকরা যেতে পারে।

যারা ট্রেড মিলে অভ্যস্ত সুবিধামতো রাতেরবেলা কোনো সময় ১০-১৫ মিনিট ট্রেড মিল করে নিতে পারেন। তবে প্রিতিদিন একই সময় করতে পারলে ভালো।

পানি : গরমের দিনে রোজা, দিন বড়। পানির ব্যাপারে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। আল্লার নিয়ামত পানিসমৃদ্ধ ফল শসা, টমাটো, তরমুজ, ডাব বেশি খেতে হবে। রাতেরবেলা, সন্ধ্যা শুরু থেকে সেহেরির শেষ ওয়াক্ত পর্যন্ত পানি নেয়া চলবে। দিন বড় বলে ভয় পাওয়ার দরকার নেই। দুনিয়ার অনেক দেশই আছে যেখানে দিন শুরু হয় ভোর ৫টায়, শেষ হয় রাত ১০টায়। আসলে আল্লাহর দেয়া শরীরের অ্যাডজাস্টমেন্ট ক্ষমতা অনেক বেশি।

রোজার উপকারিতা : ব্যক্তি-সংযম, সহমর্মিতার অভ্যাস বাড়ায়। চা কফি ধূমপান ইত্যাদি অনাবশ্যকীয় খাবার ও অভ্যাস/বদাভ্যাস ত্যাগ করা শেখায়।

স্বাস্থ্য : সারা দিনের অভূক্ততায় দূষিত পদার্থ ও অপ্রয়োজনীয় জিনিস বার্ণ করে।

বিশেষভাবে জানবেন

যেসব ডায়াবেটিক রোগী সব ঝুঁকির কথা জেনেও রোজা রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, তাদের রোজা শুরুর আগে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিতে হবে। এর মধ্যে আছে খালি পেটে ও খাবার ২ ঘণ্টা পর (মোট ৬ বার) রক্তের গ্লুকোজ, খালি পেটে রক্তের লিপিড, লিভার কিডনি ও হৃৎপিণ্ডের কার্যকারিতার পরীক্ষা এবং এইচবিএ১সি ইত্যাদি পরীক্ষা করে নিতে হবে।

* সবাইকে তার নিজের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। চিকিৎসকরা এক্ষেত্রে সহায়তা প্রদান করবেন।

* ডায়াবেটিক রোগীরা রোজা রাখতে পারবেন। আগে থেকে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রস্তুতি নিতে হবে।

* রোজার সময় নিজে ডায়াবেটিসের ওষুধ সমন্বয় করবেন না, এতে মারাত্মক পরিণতি হতে পারে।

* সেহরির খাবার সেহরির শেষ সময়ের কিছু আগে খাওয়া উচিত। ইফতারের সময় বেশি চিনিযুক্ত খাবার খাবেন না।

* রোজার সময় দিনের বেলা অতিরিক্ত ব্যায়াম করা উচিত নয়। এতে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে।

* রোজার সময় রাতের বেলা পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি (সম্ভব হলে ডাবের পানি), কম মিষ্টি রসাল ফল এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত।

লেখক : মেডিসিন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ, বারডেম, ঢাকা