Tuesday, November 8, 2016

গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগ

sasthobarta protidin
গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগ
গ্যাস্ট্রিক বা আলসার নামটির সঙ্গে পরিচিত নন এমন লোক খুঁজে বের করা হয়তো খুব কঠিন হবে। সাধারণত লোকজন গ্যাস্ট্রিক বা আলসার বলতে যা বুঝে থাকেন আমরা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় তাকে বলি পেপটিক আলসার।

পেপটিক আলসার যে শুধু পাকস্থলীতেই হয়ে থাকে তা কিন্তু নয়; এটি পৌষ্টিকতন্ত্রের যে কোনো অংশেই হতে পারে। সাধারণত পৌষ্টিকতন্ত্রের যে যে অংশে পেপটিক আলসার দেখা যায় তা হচ্ছে-

* অন্ননালির নিচের প্রান্ত

* পাকস্থলী

* ডিওডেনাম বা ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রথম অংশ এবং

* পৌষ্টিকতন্ত্রের অপারেশনের পর যে অংশে জোড়া লাগানো হয় সে অংশে।

পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় উন্নয়নশীল দেশ তথা আমাদের এ উপমহাদেশে এ রোগীর সংখ্যা বেশি। ধনীদের চেয়ে গরিব লোকদের মধ্যে এ রোগ বেশি দেখা যায়। নারী-পুরুষ প্রায় সমানভাবে এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।

যেসব কারণে পেপটিক আলসার হতে পারে

বংশগত : কারো নিকটতম আত্মীয়স্বজন, যেমন- মা, বাবা, চাচা, মামা, খালা, ফুফু যদি এ রোগে ভুগে থাকেন তবে তাদের পেপটিক আলসার হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। যাদের রক্তের গ্র“প ‘ও’ তাদের মধ্যে এ রোগের প্রবণতা বেশি।

রোগ-জীবাণু : হেলিকোবেক্টারে পাইলোরি নামক এক ধরনের অণুজীব এ রোগের জন্য বহুলাংশে দায়ী।

ওষুধ : যেসব ওষুধ সেবনে পেপটিক আলসার হতে পারে তার মধ্যে ব্যথানাশক ওষুধ বা ঘংধরফং বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

ধূমপান : ধূমপায়ীদের মধ্যে এ রোগের প্রবণতা বেশি।

এ ছাড়াও কারো পৌষ্টিকতন্ত্র থেকে যদি বেশি পরিমাণে অ্যাসিড ও প্রোটিন পরিপাককারী এক ধরনের এনজাইম বা পেপসিন নামে পরিচিত তা নিঃসৃত হতে থাকে এবং জন্মগতভাবেই পৌষ্টিকতন্ত্রের গঠনতন্ত্রের গঠনগত কাঠামো দুর্বল থাকে তাহলেও পেপটিক আলসার হতে পারে।

সাধারণত যে কথাটা প্রচলিত ভাজা-পোড়া কিংবা ঝালজাতীয় খাবার খেলে পেপটিক আলসার হয় এর কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ চিকিৎসা বিজ্ঞানে মেলেনি। যারা নিয়মিত আহার গ্রহণ করেন না কিংবা দীর্ঘ সময় উপোস থাকেন, তাদের মধ্যে পেপটিক আলসার দেখা দিতে পারে।

উপসর্গ

পেটব্যথা : সাধারণত পেটের উপরিভাগের মাঝখানে বক্ষ পিঞ্জরের ঠিক নিচে পেপটিক আলসারের ব্যথা অনুভব হয়। কখনও কখনও ব্যথাটা পেছনের দিকেও যেতে পারে।

ক্ষুধার্ত থাকলে ব্যথা : এ জাতীয় রোগী ক্ষুধার্ত হলেই প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করে এবং খাবার খেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যথা কমে যায়।

রাতে ব্যথা : অনেক সময় রাতের বেলা পেটে ব্যথার কারণে রোগী ঘুম থেকে জেগে ওঠে। কিছু খেলে ব্যথা কমে যায় এবং রোগী আবার ঘুমিয়ে পড়ে।

মাঝে মধ্যে ব্যথা : পেপটিক আলসারের ব্যথা সাধারণত সবসময় থাকে না। একাধারে ব্যথা কয়েক সপ্তাহ চলতে থাকে। তারপর রোগী সম্পূণরূপে ভালো হয়ে যায়, এ অবস্থা কয়েক মাস থাকে তারপর আবার কয়েক সপ্তাহ ধরে ঠিক আগের মতো ব্যথা অনুভব হয় ।

ব্যথা কমে : পেপটিক আলসার ব্যথা সাধারণ দুধ, অ্যান্টাসিড, খাবার খেলে কিংবা বমি করলে অথবা ঢেঁকুর তুললে ব্যথা কমে।

এছাড়াও পেপটিক আলসারের মধ্যে বুক জ্বালা, অরুচি, বমি বমি ভাব, ক্ষুধামন্দা, কিংবা হঠাৎ রক্ত বমি অথবা পেটে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব হতে পারে।

চিকিৎসা

শৃংখলা : পেপটিক আলসারে আক্রান্ত রোগীদের অবশ্যই ধূমপান বন্ধ করতে হবে। ব্যথানাশক ওষুধ অর্থাৎ এসপ্রিনজাতীয় ওষুধ সেবন থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকতে হবে এবং নিয়মিত খাবার গ্রহণ করতে হবে।

ওষুধ : পেপটিক আলসারের রোগীরা সাধারণত অ্যান্টাসিড, রেনিটিডিন, ফেমোটিডিন, ওমিপ্রাজল, লেনসোপ্রাজল, পেনটোপ্রাজলজাতীয় ওষুধ সেবনে উপকৃত হন।

কারণভিত্তিক চিকিৎসা : জীবাণুজনিত কারণে যদি এ রোগ হয়ে থাকে তবে বিভিন্ন ওষুধের সমন্বয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়, যা ট্রিপল ড্রাগ থেরাপি নামে পরিচিত।

অপারেশন : পেপটিক আলসারের ক্ষেত্রে অপারেশন সাধারণত জরুরি নয়। তবে দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ সেবনের পরও যদি রোগী ভালো না হন, তবে কিছু খেলে যদি বমি হয়ে যায় অর্থাৎ পৌষ্টিকনালির কোনো অংশ যদি সরু হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে অপারেশন করিয়ে রোগী উপকৃত হতে পারেন।

সময়মতো পেপটিক আলসারের চিকিৎসা না করলে রোগীর নিুলিখিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন-

* পাকস্থলী ফুটা হয়ে যেতে পারে

* রক্ত বমি হতে পারে

* কালো পায়খানা হতে পারে

* রক্তশূন্যতা হতে পারে

* ক্যান্সার হতে পারে (কদাচিৎ) এবং

* পৌষ্টিকনালির পথ সরু হয়ে যেতে পারে এবং রোগীর বারবার বমি হতে পারে।

কাজেই যারা দীর্ঘমেয়াদি পেপটিক আলসারে ভুগছেন তাদের উচিত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া। পেপটিক আলসারজনিত জটিলতা আগে থেকেই শনাক্ত করা এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা নেয়া। প্রয়োজনে অপারেশনের মাধ্যমে চিকিৎসা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা ধরে না রেখে সুস্থ-সুন্দর-স্বাভাবিক জীবনযাপন করা।

লেখক : বৃহদন্ত্র ও পায়ুপথ সার্জারি বিশেষজ্ঞ, প্রাক্তন চেয়ারম্যান, কলোরেকটাল সার্জারি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

0 comments:

Post a Comment